প্রকাশিত: Fri, Dec 9, 2022 6:01 PM
আপডেট: Fri, May 9, 2025 10:21 AM

ইরানে হিজাব-প্রতিবাদী তরুণের ফাঁসি আবারও সংঘর্ষে উত্তাল পথঘাট

ইমরুল শাহেদ: বৃহস্পতিবার ২৩ বছরের যুবক মোহসেন শেকারিকে ফাঁসিকে কেন্দ্র করে আবারও গর্জে উঠেছেন সাধারণ মানুষ, পথে নেমেছে যুব-সম্প্রদায়। আগুন জ্বালিয়ে, ব্যানার-পতাকায় তীব্র প্রতিবাদে সামিল সকলে। দাবি একটাই, মৌলবাদের চোখরাঙানি থেকে মুক্তি! মোহসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছেন, হিজাব-বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। গত কয়েক মাস ধরে ইরানে হিজাব নিয়ে যে আন্দোলন চলছে, তাতে এই প্রথম ফাঁসির ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবারই। দোষী সাব্যস্তর তালিকায় আরও ১০ জনের নাম রয়েছে। এই অবস্থায় আবারও নতুন করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল ইরান। দি ওয়াল

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি নিউজ১৮ এ বলা হয়েছে, গত তিন মাস থেকে ইরানে চলছে হিজাব বিরোধী আন্দোলন। ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের নৃশংসভাবে দমন-পীড়নের জন্য শটগানের টার্গেট করেছে নিরস্ত্র নারীদের মুখ, স্তন ও যৌনাঙ্গকে। দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাক্তার এবং নার্সরা প্রতিবাদের ভয়ে গোপনে বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসা করছেন। তারা এমন একটি প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করেছেন যেখানে মহিলারা প্রায়শই পুরুষদের কাছে বিভিন্ন ক্ষত নিয়ে আসে, যাদের পায়ে, নিতম্বে এবং পিঠে শটগানের গুলি ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী, পুরুষ ও শিশুদের চোখে গুলির কারণে শত শত তরুণ ইরানি স্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

বৃহস্পতিবার সকালেই জানা যায়, ‘মোহারেবা’ বা ঈশ্বরদ্রোহিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে মোহসেন শেকারি-র। অভিযোগ ওঠে, রীতিমতো গোপনে এবং গা-ছাড়া ভাবে তাঁর আইনি প্রক্রিয়া চলেছে ইরানের আদালতে। এর পরে দুপুর থেকেই ইরানের রাজধানী তেহরানে শুরু হয় জমায়েত। অবরোধ করা হয় রাস্তা। আরও একাধিক শহরে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভের আঁচ। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, একজন ‘দাঙ্গাকারী’ হিসেবে মোহসেনকে অভিযুক্ত করা হয় আদালতে। তার ‘অপরাধ’ গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি তেহরানের একটি বড় রাস্তা অবরোধ করেছিলেন এবং আধাসামরিক বাহিনীর একজন সদস্যকে কাটারি দিয়ে জখম করেছিলেন। মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই, নিছক লোক দেখানো বিচারে দোষী সাব্যস্ত করা হয় মোহসেনকে। তার পরেই দেওয়া হয় ফাঁসি। মানবাধিকার সংগঠনগুলির অন্দরে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে, ইরানের এই মানসিকতার সঙ্গে যদি সংঘবদ্ধ লড়াই না করা যায়, তাহলে এভাবে প্রতিদিন বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা শুরু হবে। 

বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিয়ে জানিয়েছে, ‘গণবিক্ষোভ দমন করতে এবং জনগণের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতেই এভাবে মৃত্যুদণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কোনওরকমে, গোপনে, একটি অন্যায্য বিচার প্রক্রিয়া চালিয়েই কঠোর শাস্তি দিচ্ছে এই আদালতগুলো।’

প্রসঙ্গত, ইরানে এই গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছে হিজাব না পরার অধিকার নিয়ে। এই আন্দোলনেই ইরানের নীতি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল ২২ বছরের তরুণী মহসা আমিনিকে। পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় তার। তার পরেই তাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে পথে নামেন হাজার হাজার ইরানি বিক্ষোভকারী। ৩১টি প্রদেশের ১৬০ শহরে ছড়িয়ে পড়ে মহিলাদের নেতৃত্বে চলা এই বিক্ষোভ আন্দোলন। সম্পাদনা: খালিদ আহমেদ